

* মো. শাহজাহান বাশার, স্টাফ রিপোর্টার*
**প্রকাশিত: বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫**
**ঢাকা:**
নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে নিজেদের দীর্ঘদিনের অবস্থান থেকে অবশেষে সরে এসেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। আগে নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নের দাবি জানালেও এখন দলটি সংবিধানে নির্বাচন কমিশন গঠনের বিধান অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে মত দিয়েছে। বুধবার (২৩ জুলাই) ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের’ দ্বিতীয় দফার ১৮তম দিনের সংলাপে এই নতুন অবস্থান স্পষ্ট করে বিএনপি।
সংলাপে আলোচনার মূল বিষয় ছিল পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ প্রক্রিয়া। সেগুলো হলো—
১. নির্বাচন কমিশন
২. সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)
৩. মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি)
৪. দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)
৫. ন্যায়পাল (ওমবুডসম্যান)
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সংবিধানের মধ্যেই এসব নিয়োগের প্রক্রিয়া সংযুক্ত করার পক্ষে মত দিলেও বিএনপি চারটি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ পদ্ধতিতে কোনো ছাড় দেয়নি। দলটির অবস্থান, এগুলোর জন্য আলাদা আইন করে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে।
তবে নির্বাচন কমিশন নিয়ে ব্যতিক্রমী অবস্থান জানিয়ে বিএনপি বলেছে, জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী সংবিধানে নির্বাচন কমিশনের নিয়োগ পদ্ধতি যুক্ত করা যেতে পারে।
বিএনপি আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব দিয়েছে—নির্বাচন কমিশন গঠনে ৭ সদস্যের পরিবর্তে ৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি সিলেকশন কমিটি গঠনের। এই কমিটিতে বিএনপির প্রস্তাব অনুযায়ী যারা থাকবেন:
* সংসদ নেতা (প্রধানমন্ত্রী)
* জাতীয় সংসদের স্পিকার
* জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দলের নেতা
* বিরোধী দলীয় ডেপুটি স্পিকার
* প্রধান বিচারপতির একজন মনোনীত প্রতিনিধি
এখানে সরকারের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ঠেকিয়ে রাজনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখাই বিএনপির উদ্দেশ্য বলে জানায় দলটি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং তা নিয়ে জনগণের আস্থা ফিরে পাওয়ার প্রশ্নে বিএনপির এই নমনীয়তা রাজনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় একটি কৌশলগত পদক্ষেপ হতে পারে। অন্যদিকে বাকি চারটি প্রতিষ্ঠানে কোনো ছাড় না দিয়ে দলটি তার ন্যায্যতা ও দৃঢ় অবস্থানও ধরে রেখেছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চলমান সংলাপ ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থা গড়ার একটি প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে। নির্বাচন কমিশন গঠনে বিএনপির নমনীয়তা এবং বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থান ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সমঝোতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।