

মোঃ শাহজাহান বাশার ,স্টাফ রিপোর্টার,
নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তনের পথে হাঁটছে বাংলাদেশ। দীর্ঘদিনের বিতর্ক এবং মতপার্থক্যের অবসান ঘটিয়ে এবার দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল নতুন পদ্ধতিতে নির্বাচন কমিশন গঠনে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বুধবার (২৩ জুলাই) চলমান জাতীয় সংলাপের ১৮তম দিনে এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ঘোষণা আসে।
সংলাপ শেষে গণমাধ্যমের সামনে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলো তাদের পূর্বের অবস্থান থেকে সরে এসে একটি স্বাধীন ও কার্যকর নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গঠনমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। এই ঐকমত্য আগামী দিনে দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করবে।”
এই নতুন প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট বাছাই কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এতে থাকবেন: স্পিকার (কমিটির প্রধান),ডেপুটি স্পিকার (বিরোধী দলের প্রতিনিধি হিসেবে),প্রধানমন্ত্রী,বিরোধীদলীয় নেতা,আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি (প্রধান বিচারপতির মনোনীত)
এই কমিটি বিদায়ী কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিন আগেই কাজ শুরু করবে এবং সর্বসম্মতিক্রমে একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্য কমিশনারদের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে। রাষ্ট্রপতি কেবল তাদের নিয়োগ দেবেন।
প্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত যাচাই-বাছাই, নৈতিকতা ও নিরপেক্ষতা মূল্যায়ন এবং গোপন কোনো প্রভাব থেকে মুক্ত রাখার জন্য কমিটি একটি নির্দিষ্ট আইন ও আচরণবিধির আওতায় কাজ করবে। স্পিকারের অধীনে সংসদ সচিবালয় এই কমিটিকে প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা দেবে।
সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের ২, ৪, ৫(ক) ও ৬ উপ-অনুচেদ অপরিবর্তিত থাকলেও, ৫ উপ-অনুচেদে একটি নতুন ধারা যুক্ত করার প্রস্তাব এসেছে, যাতে জাতীয় সংসদের জবাবদিহিতার আওতায় নির্বাচন কমিশনের জন্য আইন ও আচরণবিধি প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে।
এইদিনের সংলাপে নির্বাচন কমিশন বিষয়ক আলোচনায় অগ্রগতি হলেও একই সূচিতে থাকা সরকারি কর্ম কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং ন্যায়পাল নিয়োগ প্রসঙ্গ স্থগিত রাখা হয়। এসব বিষয়ে পরবর্তীতে আলোচনা হবে বলে জানানো হয়।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “চলতি জুলাই মাসের মধ্যেই জাতীয় সনদ চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে। আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে, এবং আমরা আশা করছি শিগগিরই জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি পূর্ণাঙ্গ জাতীয় সনদ প্রণয়ন করতে পারব।”
গণতন্ত্র, সুশাসন ও স্বচ্ছতা নিয়ে কাজ করা বিশ্লেষকরা এই ঐকমত্যকে “গণতান্ত্রিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক” হিসেবে দেখছেন। তারা মনে করছেন, দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে যে সংকট ছিল, এই প্রক্রিয়া তা অনেকাংশে নিরসন করতে সক্ষম হবে।
নতুন এই পদক্ষেপকে দেশের গণতন্ত্রের জন্য এক আশার আলো হিসেবেই দেখা হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর এই অভূতপূর্ব ঐকমত্য যদি কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন হয়, তবে ভবিষ্যতের নির্বাচনগুলো হতে পারে আরও স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য—যার অপেক্ষায় ছিল গোটা জাতি।