

মোঃ শাহজাহান বাশার
স্টাফ রিপোর্টার
**ঢাকা, ২৩ জুলাই:**
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক সংসদ সদস্য শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি অবশেষে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা আলোচিত অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় বেকসুর খালাস পেয়েছেন। বুধবার (২৩ জুলাই) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারক মো. জাকারিয়া হোসেন এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বলা হয়, রাষ্ট্রপক্ষ আসামির বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে তাকে অভিযোগ থেকে সম্পূর্ণ অব্যাহতি দেওয়া হলো।
আদালতে রায় ঘোষণার সময় উপস্থিত ছিলেন শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি। এ সময় তার পক্ষে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট মহি উদ্দিন চৌধুরী, জামাল হোসেন, তানজীম চৌধুরী ও খায়রুল ইসলাম লিটন। তারা জানান, দীর্ঘ প্রায় এক দশকের আইনি লড়াইয়ের পর ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এর আগে গত ১৬ জুলাই যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের জন্য ২৩ জুলাই দিন ধার্য করেন। সেই অনুযায়ী আজকের এই বহুল প্রতীক্ষিত রায় ঘোষণা করা হয়।
দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক মো. মঞ্জুর মোর্শেদ বাদী হয়ে ২০১৪ সালের ৯ অক্টোবর রাজধানীর রমনা থানায় এ মামলা দায়ের করেন। এজাহারে অভিযোগ করা হয়, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি তার সম্পদ বিবরণীতে মোট ১৩ লাখ ১৩ হাজার ৯৪০ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেন। এর মধ্যে রয়েছে জমি ক্রয়ের রেজিস্ট্রেশন বাবদ ৩ লাখ ১৩ হাজার ৯৪০ টাকা এবং লক্ষ্মীপুরের কুশখালীতে একটি স্কুলে অনুদান বাবদ ১০ লাখ টাকা। দুদক দাবি করে, এসব তথ্য ইচ্ছাকৃতভাবে গোপন করা হয়েছে যা দুদক আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এছাড়া অনুসন্ধানে দুদক আরও দাবি করে, এ্যানির বিরুদ্ধে ১ কোটি ৪০ লাখ ৪২ হাজার ৬৭০ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। মামলার নথি অনুযায়ী, তার স্থাবর-অস্থাবর ও অপ্রদর্শিত সম্পদ মিলিয়ে মোট ৩ কোটি ৭৫ লাখ ৩৫ হাজার ২৬৬ টাকার মালিকানা পাওয়া যায়। দায় হিসেবে ৫০ লাখ টাকা দেখানো হলেও নিট সম্পদ দাঁড়ায় ৩ কোটি ২৫ লাখ ৩৪ হাজার ২৫৭ টাকা। অথচ ২০১৩ সালের ৩০ জুন প্রদত্ত সম্পদ বিবরণীতে তিনি ১ কোটি ৭৬ লাখ ৯১ হাজার ৫৮৭ টাকার সম্পদের কথা উল্লেখ করেন।
২০১৬ সালের ২৪ মে বিশেষ জজ আদালত মামলাটির অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। পরে এ্যানি হাইকোর্টে আবেদন করলে ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করা হয়। তবে ২০১৯ সালের ১৪ মে হাইকোর্ট মামলার ওপর থাকা স্থগিতাদেশ তুলে নেন এবং বিচারিক আদালতকে ছয় মাসের মধ্যে বিচার শেষ করার নির্দেশ দেন। বিচার চলাকালে ১২ জন সাক্ষীর মধ্যে ৯ জন সাক্ষ্য দেন।
দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে অবশেষে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি আদালত থেকে বেকসুর খালাস পেলেন। বিএনপি নেতাকর্মীরা এই রায়কে ‘বিচারের বিজয়’ হিসেবে উল্লেখ করছেন।
রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় এ্যানির প্রধান আইনজীবী অ্যাডভোকেট মহি উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “আমরা শুরু থেকেই বলে আসছিলাম যে, এ্যানি চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আদালত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করেছেন। রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে বলেই তিনি খালাস পেয়েছেন।”
বিএনপির পক্ষ থেকেও এই রায়কে স্বাগত জানানো হয়েছে। দলটির নেতারা বলেন, “সরকার শুধু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানি করতেই এই ধরনের ভিত্তিহীন মামলা করে। শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির খালাস সেই ষড়যন্ত্রের পরিণত ব্যর্থতা।”
দীর্ঘ প্রায় এক দশকের অপেক্ষার পর শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা থেকে মুক্তি পাওয়ায় রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ রায়, যা ভবিষ্যতে অনুরূপ মামলার ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।